top of page
Meera by Debasree Chakraborti

Meera by Debasree Chakraborti

শৈশব থেকেই মীরাবাঈয়ের লেখা গান লেখককে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। সেই আকর্ষণ থেকেই ২০১২ সালে ছুটে গিয়েছিলেন  মীরার জন্মস্থান কুড়কি গ্রামে। আজমের থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেড়তা একটি ছোট জনপথ, উপন্যাসের তাগিদে গিয়েছিলেন সেখানেও। আজও কুড়কি গ্রামে মীরার জন্ম স্থানটি অক্ষত অবস্থায় আছে। কুড়কি গ্রামে পৌঁছে পরিচয় হয়েছিল বৃদ্ধ মৌন সিং রাঠোরের সাথে। এই বৃদ্ধ লেখককে জানান যে যোধপুর থেকে কুড়কি পর্যন্ত নয়টি কেল্লা রয়েছে, যার মধ্যে কুড়কির কেল্লাটি সব থেকে উল্লেখযোগ্য। সেদিন কেল্লার এক কোনে বসে বৃদ্ধ গান ধরেছিলেন, "কুড়কি তেরা কোটরা নৈ খুটি কী নাক।" লেখকের ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় যে, কোনও ঐতিহাসিক চরিত্র কিংবা ইতিহাসের বিশেষ কোনও অধ্যায় নিয়ে লেখার আগে, সেই বিশেষ চরিত্র কিংবা অধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত স্থান গুলিতে ভ্রমণ করা খুবই প্রয়োজন। কারণ যুগ যুগান্ত ধরে এই সব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সেই বিশেষ চরিত্র কিংবা অধ্যায় সম্পর্কে বহু গল্প গাঁথার প্রচলিত থাকে। এই সব গল্প গাঁথার মধ্যেই আসল ইতিহাস লুকিয়ে থাকে। কারণ, স্থানীয় মানুষদের কাছে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা এই সব কাহিনীর সূত্র দিয়ে গেছেন। মীরার সম্পর্কে এই ইতিহাস লেখার আগে তাই তিনি মীরার স্মৃতি বিজড়িত সমস্ত স্থান ভ্রমণ করেন এবং সেখানকার মানুষের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপচারিতা করেন। চৈতন্য অন্তর্ধান নিয়ে গবেষণা করার সময় মীরাবাঈয়ের জীবনের বহু রহস্যময় ঘটনা আমার সামনে আসে, বৈষ্ণব সাধিকার রূপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মীরার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা এক সম্পূর্ণ আলাদা রূপ লেখকের কাছে ধরা দেয়। এই মীরা একদিন যেমন অসাধারণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন সাধ্বী সম্রাজ্ঞী, তার পাশাপাশি তিনি একজন সমাজ সংস্কারক। মীরা শৈশব থেকে রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলের ভেতরে বিরাজিত অবস্থায় "মীরাপন্থী" সম্প্রদায় তৈরি করেছিলেন, পাঁচশো বছর পরও যারা সমান ভাবে সক্রিয়। মীরাবাঈয়ের নেতৃত্বে এই সম্প্রদায় নারী জাগরণ তথা সতীদাহের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতীবাদ গড়ে তুলেছিল। কুড়কি গ্রামে আজও মানুষের মুখে মুখে মীরাপন্থীদের নিয়ে তৈরি বহু গল্প গাঁথা শোনা যায়। লেখক কুড়কি এবং মেড়তাবাসীদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য এবং বিভিন্ন বইয়ের ওপর নির্ভর করে এই উপন্যাসটির পথচলা শুরু করান। মেড়তা মীরার ঠাকুরদা রাও দুদাজির রাজধানী ছিলো। মীরার মায়ের মৃত্যুর পর তিনি মীরাকে মেড়তায় নিয়ে আসেন। লেখক নিজের চোখে রাও দুদাজীর তৈরি মেড়তা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখেছেন। একটি বিশাল সরোবরের ধারে সেই দুর্গের অংশ আজও আছে, শোনা যায় বর্তমানের মতোই পাঁচশো বছর আগেও এই সরবরে গোলাপি রঙের পদ্ম ফুলে ঢেকে থাকতো। সেদিন মেড়তা দুর্গের ধ্বংসাবশেষের মাঝে দাড়িয়ে সেই সরোবরের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে, অতীতের বহু ঘটনাকে যেন প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলেন। বহু দূর দূরান্ত পর্যন্ত এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আজও খুঁজে পাওয়া যায়। মেড়তার ঠিক মাঝখানে একটি মহল আজও রাজস্থান সরকার দ্বারা সংরক্ষিত আছে, স্থানীয় মানুষের ধারনা এই মহলেই মীরা থাকতেন। আজও সেই মহলের এক কোণে চতুর্ভুজজির মন্দিরটি পাঁচশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে বিরাজিত। এই চতুর্ভুজজির মন্দিরে বসেই মীরা আর রাও দুদাজি ঈশ্বর সাধনা করতেন। আজও এই মন্দিরে সেই চতুর্ভুজজির মূর্তিটিকেই পূজা করা হয়। এই মন্দিরের এক কোণে মীরাবাঈয়ের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। যার নীচে মীরার জন্মের বছর লেখা আছে ১৫৬১ সংবত (১৫০৪ খ্রিঃ), বিবাহের বছর ১৫৭৩ সংবত (১৫১৬ খ্রিঃ) এবং মৃত্যুর বছর ১৬০৭ সংবত (১৫৫০ খ্রিঃ)। মেড়তায় মীরার নামে একটি সৌধ আছে, সেখানেও তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুর সময় একই লেখা আছে। এর অর্থ মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। লেখক তাঁর এই উপন্যাসটির মাধ্যমে মীরাবাঈয়ের জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়কে আলোকিত করার চেষ্টা করেছেন। ছেচল্লিশ বছরের এই দীর্ঘ অধ্যায়ের শেষে মীরাবাঈয়ের অন্তর্ধান রহস্যের কিছুটা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। পাঁচশো বছর পর কোনও কিছু দৃঢ়ভাবে বলা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু একটি যুক্তি নির্ভর পথে এগিয়ে একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করেছেন।

 

 

প্রকাশিত হতে চলেছে দেবশ্রী চক্রবর্তী বিরচিত "মীরা" 
প্রকাশক: দে পাবলিকেশন 
প্রকাশকালঃ ১৭ই আগস্ট, ২০২১

    ₹500.00 Regular Price
    ₹425.00Sale Price
    Out of Stock
    bottom of page