Krantikal by Chintan Dutta
১৬৯৬-১৭০০ সালের বাংলার ইতিহাসে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ঘটেছিল, যেগুলো বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসটাকেই বদলে দেয়। তার মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শোভা সিংহের বিদ্রোহ। বাংলার মসনদ কার দখলে যাবে, এই নিয়ে প্রায় ১০০ বছর ধরে চলা বৈরিতার অবসান হয়, শুধু তাই নয়, আগামী ২৫০ বছরের ভারতেতিহাসের পটভূমি তৈরিতেও এর প্রভাব অনস্বীকার্য। সত্যি বলতে কী, এর প্রভাব একমুখে বলা যাবে না, তবে নিতান্তই জোরাজুরি করে বলতে গেলে এটুকু বলাই যায়, এই বিদ্রোহটা না ঘটলে হয়তো ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা হত না, কলকাতারও প্রতিষ্ঠা হত না এটা না হলে। কিংবা হয়তো হত, কিন্তু এত শীঘ্র যে ইংরেজরা ডাচ বা ফরাসিদের প্রভাব হটিয়ে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছিল- তার পেছনে শোভা সিংহ বা তাঁর বিদ্রোহকে অগ্রাহ্য করার কোনো জায়গাই নেই। কেন শুরু হয়েছিল এই বিদ্রোহ? কীভাবেই বা এগিয়েছিল তা? সারা বাংলা জুড়ে তো এমনি এমনিই দাবাগ্নির মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না কোনো বিদ্রোহ, নিশ্চয়ই জনসমর্থন ছিল তার পিছনে? আচ্ছা, কেনই বা সাধারণ মানুষ সমর্থন করলেন এই সশস্ত্র বিপ্লবকে? সুবেদারের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন বুঝি? তবে যে মাত্র আট বছর আগেই শায়েস্তা খাঁয়ের শাসনে বাংলা সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছেছিল? কেবল গিমিক ছিল বুঝি সে সব? বিদ্রোহটা দমিতই বা হল কীভাবে? কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে? বিদ্রোহের দমনের পর শান্তি আর স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিল তো সাধারণ বাঙালিদের জীবনে? আর যে কোনো বিদ্রোহের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেটা- তা হল, কোন সংজ্ঞাই বা নিরূপণ করা যায় এই বিদ্রোহের? কেবল ক্ষমতা দখলের লড়াই? একদল ডাকাতের সঙ্ঘবদ্ধ লুটপাট? নাকি অত্যাচারী শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ফেটে পড়েছিল এই বিদ্রোহের রূপ ধরে? বিদ্রোহী নেতা শোভা সিংহই বা কেমন শাসক ছিলেন? তিনি কি ছিলেন অত্যাচারী, ক্ষমতালিপ্সু? নাকি প্রজাদরদী, সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অঙ্গ হয়েও তার বিরুদ্ধে মূর্তিমান প্রতিবাদ? অসংখ্য বিরোধী মতের আড়ালে তাঁর প্রকৃত চরিত্রটি চাপা পড়ে যায় কেন বারবার?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে পড়তেই হবে কচি পাতা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত, শোভা সিংহের বিদ্রোহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল যে জনপদ, সেই বর্ধমানের ভূমিপুত্র চিন্তন দত্ত বিরচিত 'ক্রান্তিকাল: বাংলার ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায়'।